বাজারদরের আলোচনায় আবার উঠে আগত ডিমের দাম; বর্ষের সমাপ্ত দুই মাসে আসলেও নিউ সালের আবার বাড়তে চালু করেছে খাদ্যতালিকায় নিয়মিত থাকা এ পণ্যের দাম।
খুচরা বাজারে হুট করে অল্পসংখ্যক দিনের ব্যবধানে ডজন প্রতি ডিমের দাম ১০ হতে ১৫ টাকা বেড়ে ১২০ থেকে ১৩০ টাকা উঠেছে।
আবার বাজার ভরপুর থাকা শীতের সবজি কতিপয় দিন কিছুটা স্বস্তি দিলেও তা উবে যেতে আরম্ভ করেছে। আচমকা করে সবজিভেদে কেজিপ্রতি প্রাইস বেড়েছে ১৫-২০ টাকা।
এরমধ্যে শুক্রবার বাজারে ক্রেতাদের নিকট সুবিশাল ধকল হিসেবে আগত কাঁচামরিচের দাম; হুট করে বড়সড় ঊর্ধ্ব লাফ দিয়েছে এটি। সপ্তাহের ব্যবধানে কেজিপ্রতি ৪০-৫০ হতে বেড়ে ১১০-১২০ টাকায় চড়ে যাওয়ায় আগুনের তাপ বেড়েছে মরিচের। মূল্য বেড়েছে আদারও।
তবে এদিন ঢাকার নানারকম বাজার ঘুরে ভোজ্যতেল, চিনি এবং চালের দামে পরিবর্তন নোটিশ যায়নি।
সবজির দর বাড়ার কারণ হিসেবে বিক্রেতাদের কেউ কেউ দেশজুড়ে কড়া ঠাণ্ডা ও কুয়াশার কারণে মাঠ থেকে পাইকারি মার্কেটপ্লেসে সবজির সরবরাহ কমে প্রবল বৃষ্টিপাত কথা বলছেন।
আবার কেউ কেউ বলছেন, নিত্যপ্রয়োজনীয় খাদ্যপণ্যের প্রচুর চালানই অধুনা বিশ্ব ইজতেমামুখী। বিশেষ করে কাঁচামরিচের বড় চালান গেছে সেদিকে। ফলে প্রস্তুত হয়ে গিয়েছে রাজধানীর খুচরা বাজারগুলোতে।
এসব কারণে বর্ষের শুরুতেই আবার কাঁচাবাজারে দাম বেড়ে যাওয়ায় হতাশা প্রকাশ করেছেন মার্কেটে আসা ক্রেতারা।
মহাখালী কাঁচাবাজারে সবজি কিনতে আসা কিশোর মনজুর হোসেন বলে, “আগে যেগুলো বেড়ে বসে আছে সেগুলো তো আর কমার নাম নাই। সবজির বাজারেই কেবলমাত্র কমতে দেখেছিলাম, সেটাও অধুনা বেড়ে গেছে।
এদিন ঢাকার বিশাল বাজারগুলোতে ডজনপ্রতি ডিম বিক্রি থেকে নোটিশ গেছে ১২০ টাকায়। গলির দোকানগুলোতে তা ১৩০ টাকা পর্যন্ত উঠছে। গত সপ্তাহে যা ছিল ১১০ টাকা।
মহাখালী এলাকার দোকানি কামাল হোসেন পাইকারি থেকে খুচরা বিক্রির জন্য একশত ডিম কিনেছেন ১০০০ টাকায়। এই দোকানি বলেন, “পাইকারিতে প্রতি একশ ডিমে ৮০-১০০ টাকা দাম বেড়েছে। যেটার ইফেক্ট পড়েছে খুচরা বাজারে।“
ডিমের মূল্য বেড়ে যাওয়ার কারণ হিসেবে পোলট্রি খামার রক্ষা জাতীয় পরিষদের সাধারণ সম্পাদক খন্দকার মো. মহসীন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “উৎপাদন অবস্থায় একটি ডিমের দাম পড়ছে ১২ টাকা, সেখানে এতদিন ধরে ১০-১১ টাকায় ডিম বিক্রি হচ্ছিল। ফলে খামারিরা ক্ষতি দিচ্ছিল। উৎপাদনে ভ্যালু বাড়ার ফলেই পাইকারি বাজারে ডিমের দর বাড়ছে।“
এদিকে মার্কেটপ্লেসে ‘সরবরাহ কম থাকায়’ বেড়েছে সবজির দাম। গত সপ্তাহের তুলনায় কেজিপ্রতি তৈরি করে ১৫-২০ টাকা বেড়েছে শীতের সবজির দাম।
বাজারঘুরে নোটিশ গেছে, এক পিস বাঁধাকপি ও ফুলকপির দাম পড়ছে ৪০ থেকে ৫০ টাকা। পটল ৬০ টাকা, মিষ্টি কুমড়া বিক্রি হচ্ছে ৫০ থেকে ৬০ টাকায়। প্রতি কেজি বেগুন ৬০ থেকে ৮০ টাকা এবং করলা ১০০ থেকে ১২০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। শিমের প্রাইস কেজিতে ১০ টাকা বেড়ে ৫০ থেকে ৬০ টাকা দরে এবং শসা ৬০ হতে ৭০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। ভ্যালু বেড়েছে চাল কুমড়া ও লাউয়ের। চাল কুমড়া ৫০ হতে ৬০ টাকা এবং লাউ আকারভেদে ৭০ থেকে ৮০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
মহাখালী কাঁচাবাজারের সবজি ব্যবসায়ী মো. সোহেল বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “ফুলকপি, বেগুন, লাউয়ের দাম বাড়ছে। বেগুন অতীতের সপ্তাহে ৪০ আছিল বর্তমান ৬০। মানুষ শীতের কারণে ক্ষেতে যাইতে পারে নাই। আড়তে সবজি কম, দাম বেশি।“
একই বাজারের সবজি বিক্রেতা মোহামিন বলছেন, “কাঁচামরিচের ভ্যালু দ্বিগুণ বাড়ছে। সব মাল ইজতেমায় চইলা গেছে। ইজতেমা শেষে বাজার ঠিক হইয়া যাইব। “
খুচরা বাজারে কেজিপ্রতি পেঁয়াজের মূল্য আগের মতই ৩৫ হতে ৪০ টাকা এবং রসুন ১২০ থেকে ১৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। তবে বেড়ে গেছে আমদানি করা আদার দাম। ১৭০-১৮০ টাকা বিক্রি হওয়া চায়না আদা এ সপ্তাহে কিনতে হলো ২৪০ টাকায়। দেশি আদার দামও খানিক বেড়ে কেজিপ্রতি ১৫০ টাকা হয়েছে।
এদিকে চিনির ভ্যালু কমার লক্ষণ নেই এখনও। প্রতি কেজি খোলা চিনি ১১৫ হতে ১২০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। প্রাইস বাড়ায় দোকানিরা কেউ কেউ চিনি বিক্রি থেকেই সরে আসছেন।
মহাখালী কাঁচাবাজারের শাহরিয়ার স্টোরের ম্যানেজার বলেন, “চিনি বেচার চেয়ে না বেচা ভালো। ভ্যালু নিয়া পর্যাপ্ত ভেজাল।“
একইভাবে অপরিবর্তিত রয়েছে আটা ময়দার দাম। প্রতি কেজি উন্মুক্ত করা আটা ৬০-৬৫ টাকা এবং প্যাকেট আটা ৭০ হতে ৭৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। চাল, ডাল সয়াবিন তেলও অটল গত সপ্তাহের দামে।
পরিবর্তন আসেনি আমিষের বাজারেও। প্রতি কেজি ব্রয়লার মুরগি পূর্বের মতই ১৫০ থেকে ১৬০ টাকা, সোনালি ২৫০ থেকে ২৬০ এবং লেয়ার ২১০ হতে ২৩০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
এছাড়া ৭০০-৮০০ টাকা কেজিদরে গরুর মাংস এবং ৯০০ হতে ১০০০ টাকা কেজি দরে খাসির মাংস বিক্রি হচ্ছে। মাছের বাজারেও মূল্য প্রায় সেইম আছে।
إرسال تعليق