শীতকাল মুমিনদের জন্য ইবাদতের বসন্তকাল।শীতের সময় বিশেষ বরকত নাযিল হয়। শীতের রাতগুলো বড় ও দিনগুলো ছোট হয়।কারণ, যেন রাতেরবেলা আমরা তাহাজ্জুদ পড়তে পারি ও দিনের বেলা রোযা রাখতে পারি। নবীজী শীতকালের রোযাকে ‘শীতল গনীমত’ বলা হয়ে থাকে আখ্যায়িত করেছেন। কেননা এই সময়ে ঈষৎ শ্রমে বহু সওয়াব লাভ করা যায়। ইবাদতের এই সময়টিকে বেশি পরিমাণে কাজে লাগানোর জন্য আমরা কয়েকটি বিষয়ের প্রতি লক্ষ রাখতে পারি।তার ভিতরে অজু অন্যতম।
ইসলামের ইম্পোর্টেন্ট ইবাদতের ভিতরে অজু অন্যতম। এর দ্বারা মানুষের শারীরিক এবং আত্মিক উৎকর্ষতা লাভ হয়। মুমিন বান্দা মহান আল্লাহর মহব্বতের পাত্র হতে পারে।আল কোরআনে এসেছে, ‘নিশ্চয়ই স্রষ্টা তওবাকারীদের ভালোবাসেন এবং ভালোবাসেন সাধুতা অর্জনকারীদের।’ সুরা বাকারা, আয়াত ২২২।
যদি কোনো লোক ক্লিয়ারভাবে অজু করে ও উত্তমরূপে করে তার জন্য হাদিসেও প্রচুর ফজিলতের কথা বলা হয়েছে। অজুর আছে বহুবিধ উপকারিতা এবং তাৎপর্য।
০১. উত্তমরূপে অজু জান্নাতে যাওয়ার সরল উপায়। নবীজি (সা.) বলেছেন, ‘যখন কোনো মুসলমান উত্তমরূপে অজু করে, অতঃপর দাঁড়িয়ে মন লাগিয়ে খুশু-খুজুর সাথে দুই রাকাত নামাজ পড়ে তার জন্য জান্নাত ওয়াজিব হয়ে যায়’। -মুসলিম
০২. অজু ইমানের অর্ধেক। অজুর দ্বারা মানুষ বাহ্যিক ও ইন্টারনাল উভয় রকম সাধুতা অর্জন করার জন্য পারে। হজরত আবু মালেক হারেস ইবনে আসেম আশআরি (রহ.) হতে কথিত হাদিসে নবী (সা.) বলেছেন, ‘অজু ইমানের অর্ধেক। আলহামদুলিল্লাহ মিজানের পাল্লা পূরণ করে। সুবহানাল্লাহ ওয়াল আমদুলিল্লাহ উভয়টা পূরণ করে অথবা আসমান-জমিন ও এ দুয়ের মাঝে যা আছে সবই পূরণ করে।’
-মুসলিম
০৩. অজু দুষ্কর্ম মোচনের মাধ্যম। অজুর মাধ্যমে ছোট ছোট গুনাহ ইজিলি মাফ হয়ে যায়। হজরত ওসমান (রা.) থেকে বর্ণিত, রসুল (সা.) বলেছেন, ‘যে লোক অজু করে এবং তা উত্তমরূপে করে তার দেহ হতে সমস্ত গুনাহ বের হয়ে যায়, এমনকি তার নখের ভিতর থেকেও।’
-বুখারি
০৪. কিয়ামতের দিন উত্তমরূপে অজুকারী ব্যক্তিকে চিনতে কোনো অসুবিধা হবে না। তার অজুর অঙ্গপ্রত্যঙ্গ হতে রশ্মি চমকাতে থাকবে। হজরত আবু হুরাইরা (রা.) থেকে বর্ণিত, রসুল (সা.) বলেছেন, ‘কিয়ামতের দিন আমার উম্মতকে অভ্যর্থনা করা হবে অজুর চিহ্নের দরুন। তাদের চেহারা, হাত এবং পা হতে রশ্মি চমকাতে থাকবে। সুতরাং তোমাদের মধ্যে যে ব্যক্তি তার উজ্জ্বল্য বাড়াতে চায় সে যেন তাই করে।’
– বুখারি
শীতে অজুর বিদ্যমান এইরকম বেশি ফজিলত। প্রচন্ড ঠান্ডার কারণে অজু করতে পর্যাপ্ত দুঃখ হয়। এ কষ্ট সহ্য করে একজন মুমিন বান্দা অজু করে। এটা তার পূর্ণাঙ্গ ইমানের আলামত। এতে এই বান্দার মর্তবা মহান আল্লাহর নিকট অনেক বেড়ে যায়। তার গুনাহও মাফ হয়।
হজরত আবু হুরাইরা (রা.) থেকে বর্ণিত, রসুল (সা.) বলেছেন, ‘আমি কি তোমাদের এরূপ কাজের কথা বলব না, যাতে খোদা তোমাদের পাপরাশি মিটিয়ে দেবেন এবং গুরুত্ব সমুন্নত করবেন? সাহাবায়ে কিরাম আরজ করলেন, হে আল্লাহর রসুল! হ্যাঁ, অবশ্যই।
তিনি বললেন, তা হলো অসুবিধা ও যন্ত্রণা সত্ত্বেও পূর্ণরূপে অজু করা, মসজিদে প্রবল বৃষ্টিপাত জন্য বেশি পদচারণ ও এক নামাজের পর অন্য নামাজের জন্য অপেক্ষা করা। জেনে রেখ! এটাই হচ্ছে রিবাত- খাঁটি সীমানা প্রহরা।’ -মুসলিম।
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন