শসা উৎপাদনের জন্য উর্বর দো-আঁশ মাটি হলে ভাল হয়। শসা সারা বছর হলেও ২৫ থেকে ৩০ ডিগ্রি সেন্টিগ্রেড তাপমাত্রার মধ্যে ভালো হয়। অধিক তাপমাত্রা, দীর্ঘ দিবস ও প্রখর আলোত বেশি পুরুষ ফুল উৎপন্ন হয়।
বীজের হার
সাধারণ ভাবে প্রতি শতকে ১.৫ গ্রাম বীজ প্রয়োজন হয়। তবে উচ্চ ফলনশীল জাতের ক্ষেত্রে বীজের প্যাকেটের গায়ে লেখা নির্দেশিকা অনুসরন করতে হবে।
টবে শশা চাষের জন্য উপযুক্ত জাত নির্বাচন
বর্তমানে বাংলাদেশে বেশ কয়েক ধরণের শশার জাত চাষ করা হয়। এর মধ্যে অধিকাংশ জাতই হাইব্রিড। পটিয়া জায়ান্ট বিএডিসি বারোমাসি ও নামের ২ টি স্থানীয় জাত রয়েছে। বেসরকারী বীজ উৎপাদন প্রতিষ্ঠান গুলো বেশ কয়েকটি বিশুদ্ধ জাত ও হাইব্রিড জাত বাজারজাত করছে। শশার বিভিন্ন জাতের মধ্যে- আলভী, কিরিণ তিতুমির, নওগ্রা গ্রীন, হিমেল, গ্রীন ফিল্ড, বাশখালী, মধুমতি, শিলা, লাকি-৭ ইত্যাদি জাতসমুহ আমাদের দেশে চাষ করা হয়ে থাকে।
জীবনকাল
শসার জীবন কাল সাধারণত জাত ভেদে ৩ থেকে ৪ মাস পর্যন্ত। শতক প্রতি ৪০ থেকে ৮০ কেজি শসা তোলা যায়। শসার জাত ভেদে বীজ বপনের ৩০-৩৫ দিনের মধ্যে গাছে ফুল আসতে শুরু করে। ফুল ফোটার ১৫-২০ দিনের মধ্যে ফল সবজি হিসাবে আহরণের উপযুক্ত হয়। কচি ও পুষ্ট উভয় অবস্থায়ই শসা তোলা হয়। ফল ধরতে আরম্ভ করলে ৩/৪ দিন অন্তর শসা তোলা দরকার।
শসা চাষে সময়
- বাংলাদেশে শসার বীজ বপনের উপযুক্ত সময় ফেব্রুয়ারি থেকে মার্চ মাস পর্যন্ত।
- ফল সংগ্রহ : বপনের ৫০ দিন থেকে সংগ্রহ করতে পারবেন ।
- শসা চাষে সার প্রয়োগ/ব্যবস্থাপনা
শসার বেশি ফলন ও গাছের বৃদ্ধির জন্য নিয়মমতো সার দিতে হবে। প্রতি মাদায় পচা গোবর, ছাই, পচা কচুরিপানা, জৈব সার ইত্যাদি মিলিয়ে ৫-৬ কেজি, ১০০ গ্রাম টিএসপি, ৬০-৭০ গ্রাম এমপি সার প্রয়োগ করে মাটিতে ভালোমতো মিশিয়ে দিতে হবে। ১৫-২০ দিন পর পর প্রতি মাদায় ৫০ গ্রাম হারে ইউরিয়া উপরি প্রয়োগ করতে হবে।
৬-৭ ফুট দূরত্বে ১ ফুট গভীর ও ১ ফুট ব্যাসের গর্ত / মাদা তৈরী করতে হবে এবং সারি থেকে সারির দূরত্ব হবে ১.৫-২ মি.।
শসা চাষে সেচ ও পানি নিষ্কাশন
শসা পানির প্রতি খুব সংবেদশীল। মাটিতে রস কম থাকলেই সেচ দেয়া প্রয়োজন। তবে ইউরিয়া উপরি প্রয়োগের পর সেচ দেয়া উত্তম। খেয়াল রাখবেন শসা গাছের মাটি শুকিয়ে গেলে ফুল ঝরে যায় এবং গাছ ঢলে আসে। আবার বর্ষাকালে ক্ষেতে পানি জমে থাকলেও শসার জন্য ক্ষতিকর। বৃষ্টি বেশি হলে সেচ দেয়ার দরকার নেই। কয়েকদিন পানি জমে থাকলেই গাছের গোঁড়া পচে মরে যেতে পারে। সেজন্য নিকাশের ব্যবস্থা করতে হবে।
সেচের সময়
গ্রীষ্মকালে ৪/৫ দিন অন্তর সেচ দেওয়া আবশ্যক। সেচের সুবিধার জন্য ২ টি বেডের মধ্যে ১২-১৫ ইঞ্চি নালা রাখা উচিৎ।
শসা চাষে আগাছা ও নিড়ানি
জমি আগাছা মুক্ত রাখতে হবে। প্রতিবার ইউরিয়া সার দেয়ার পর আগাছা পরিষ্কার করতে হবে। প্রয়োজনে সেচ ও নিষ্কাশনের ব্যবস্থা নিতে হবে। গাছ লতানোর জন্য মাচার ব্যবস্থা করতে হবে। গাছ একটু বড় হলেই মাচা তৈরি করে দিতে হবে। রোগবালাই দমনে উপযুক্ত ব্যবস্থা নিতে হবে। মনে রাখবেন শসা গাছ বিভিন্ন রোগের আশ্রয়দাতা। তাই ক্ষেত সবসম্য আগাছামুক্ত রাখতে হবে।
শসা চাষে পোকামাকড় ও রোগদমন
ডাউনি মিলডিউ শসার সবচেয়ে ক্ষতিকর রোগ। এ রোগ হলে পাতার নিচে প্রথমে জলবসা গোল গোল দাগ পড়ে। পরে দাগগুলো শুকিয়ে বাদামি হয় ও ওপরে উঠে আসে। শেষে পুরো পাতাই শুকিয়ে ফেলে। এই রোগ হলে অনুমোদিত ছত্রাকনাশক ব্যবহার করতে হবে। ফলের মাছি কচি শসা নষ্ট করে। ফলের মাছি পোকা নিয়ন্ত্রনের জন্য জমিতে বিষ টোপ বা সেক্স ফেরোমোন ফাঁদ পাততে হবে।
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন