বুধবার রাত ৯টার দিকে নয়াপল্টন এলাকায় গিয়ে সুনসান নীরবতা লক্ষ্য যায়। বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়টি যেন পরিণত হয়েছে ভূতের বাড়িতে। কার্যালয়ের ভেতরে যত্রতত্র ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে আসবাবপত্র। খণ্ডিত অবস্থায় পাওয়া গেছে কিছু ঘরের দরজা। এছাড়াও অগণিত পানির বোতল, পেঁয়াজ, রসুনও পড়ে থাকতে লক্ষ্য গেছে।

রাজধানীর নয়াপল্টন বুধবার দুপুরের পর থেকে যেন রণক্ষেত্রে রুপান্তর হয়। বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সম্মুখে চলা ঘর্ষণ ও পুলিশের অভিযানে একজন নিহত এবং কমপক্ষে ১৮ মানুষ আঘাতগ্রস্থ হওয়ার সংবাদ পাওয়া গেছে। এ ছাড়া বিএনপি নেতা রুহুল কবির রিজভীকে গ্রেপ্তার করা হয়। ১০ ডিসেম্বরের বিভাগীয় অধিবেশন নিয়ে উত্তেজনা ছড়ানোর অভিযোগে আমান উল্লাহ আমান এবং শহীদ উদ্দীন চৌধুরী এ্যানিকে হেফাজতে নেয় পুলিশ। দিন শেষে পুলিশ জানায়, কমপক্ষে ৩০০ নেতাকর্মীকে আটক করা হয়েছে।
এদিকে রাত ৯টার দিকে দফতর এলাকায় গিয়ে সুনসান নীরবতা নোটিশ যায়। কার্যালয়টি যেন রুপান্তর হয়েছে ভূতের বাড়িতে। কার্যালয়ের ভেতরে যত্রতত্র ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে আসবাবপত্র। চূর্ণিত অবস্থায় পাওয়া গেছে কয়েকটি ঘরের দরজা। এছাড়া অসংখ্য পানির বোতল, পেঁয়াজ, রসুনও পড়ে থাকতে লক্ষ্য গেছে।
বুধবার রাত ৯টার দিকে বিএনপি কার্যালয়ে প্রবেশ করার সুযোগ পান গণমাধ্যমকর্মীরা। কলাপসেবল গেট পেরিয়ে ভেতরে যেতে মোবাইলের শিখা ইউজ করতে হয়েছে।
নিচতলায় প্রবেশমুখেই জিয়াউর রহমানের ১টি ভাস্কর্য রয়েছে, যেটি কাঁচ দ্বারা ঘেরা ছিল। তবে তা খণ্ডিত সিচুয়েশনে পাওয়া যায়।
নিচতলা হতে সিঁড়ি ভেঙে ঊর্ধ্বে উঠতে চোখে-নাকে অনুভূত হয়ে যায় টিয়ারশেলের ঝাঁজ। ছয়তলা ভবনটি ছিল জনমানবশূন্য।
দ্বিতীয় তলায় রয়েছে মেয়ে টিমের কার্যালয়। সেখানে ছড়িয়ে ছিটিয়ে পড়ে থাকতে দেখা গেছে চেয়ার-টেবিলসহ আদার্স সরঞ্জাম। একটি কক্ষে স্তূপ করে রাখা সিচুয়েশনে পাওয়া যায় অগণিত পানির বোতল।
তৃতীয় তলায় জেনারেল সেক্রেটারির কক্ষ। সেটির দরজাও চূর্ণিত অবস্থায় পাওয়া যায়।
চতুর্থ তলার ছাত্রদল, যুবদল ও কৃষকদলের কার্যালয়ে আসবাবপত্র এলোমেলা পরিস্থিতিতে পড়ে থাকতে লক্ষ্য গেছে। মেঝেতে কয়েকটি কাপড়ের পোড়া ভাগ পাওয়া গেছে।
ধারণা করা হয়, টিয়ার শেলের আগুনের তাপ থেকে খালাস পেতে কাপড় পোড়ানো হয়েছে। এছাড়া প্রতিটি কামরার টেবিলে ছড়িয়ে ছিল কাগজপত্র।
পঞ্চম তলায় জাসাসের কার্যালয় এবং ষষ্ঠ তলায় জিয়া পাঠাগার। অন্যান্য তলার মতো এই দুই তলাতেও আসববাবপত্র ছড়ানো-ছিটানো অবস্থায় পাওয়া যায়।
কার্যালয় বা সড়কে বিএনপির কাউকে নোটিশ না গেলেও নাইটিঙ্গেল মোড় থেকে ফকিরাপুল মোড় পর্যন্ত পুলিশ মেম্বারদের উপস্থিতি ছিল আখিতে পড়ার মতো। আছে রায়ট কার ও ব্যারিকেড। থমথমে পরিস্থিতি রিরাজ করছে পুরো নয়াপল্টন এলাকায়।
বুধবার বিকেলের দিকে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সম্মুখে দলীয় সহযোগীদের সঙ্গে পুলিশের ব্যাপক সংঘর্ষ হয়। এই সময় গুলিতে নিহত হন মকবুল হোসেন নামে এক ব্যক্তি।
নিহত মকবুল হোসেনের জ্যেষ্ঠ ভাইয়া আব্দুর রহমান সাংবাদিকদের জানান, তার ভাইয়া বিএনপির সমর্থক ছিলেন। তবে মকবুল কোনো রাজনৈতিক দলের সাথে জড়িত ছিলেন না বলে দাবি করেন তার গৃহিণী হালিমা বেগম। সংঘর্ষে কমপক্ষে ১৮ মনুষ্য আহত হওয়ার বার্তা পাওয়া গেছে।

এদিকে সংঘর্ষের পর দলীয় দফতর থেকে পরোয়ানা থাকায় বিএনপি নেতা রুহুল কবির রিজভীকে গ্রেপ্তার করা হয়। এছাড়া ১০ ডিসেম্বরের বিভাগীয় সভা নিয়ে উত্তেজনা ছড়ানোর অভিযোগে আমান উল্লাহ আমান ও শহীদ উদ্দীন চৌধুরী এ্যানিকে হেফাজতে গ্রহণ করে পুলিশ।
রাতে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) গুপ্তচর অতুলনীয় ও অতিরিক্ত কমিশনার মো. হারুন অর রশীদ জানান, বিএনপি কার্যালয় হতে ৩০০ নেতা-কর্মী ও সমর্থককে আটক করা হয়েছে। একই টাইমে কেন্দ্রীয় কার্যালয় থেকে ১৫টি ককটেল উদ্ধারের দাবি করেন তিনি।
বুধবার বিকেলে এই সংঘর্ষের পর একটানা এরিয়ায় সৃষ্টি হয়ে যায় থমথমে পরিবেশ।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, দুই সাইডের উপায় ধরে পুলিশ আচমকা বাঁশি বাজিয়ে টিয়ার শেল ছুড়ে বিএনপির কার্যালয়ের সামনে অবস্থান করা নেতা-কর্মীদের দিকে এগিয়ে আসে। এই অবস্থায় দলটির নেতা-কর্মীরা পিছু হটেন। মৌলিক রাস্তার পাশের অলি-গলিতেও লাঠিপেটা করে পুলিশ।
এর প্রথমে দুপুর ১২টার দিকে নয়াপল্টন এরিয়ায় একের অধিক সাঁজোয়া যান, প্রিজন ভ্যান এবং পুলিশের এক্সট্রা স্ট্রাইকিং ফোর্স মোতায়েন করা হয়।
ডিএমপির মতিঝিল বিভাগের উপকমিশনার হায়াতুল ইসলাম সাংবাদিকদের বলেন, ‘১০ তারিখের সমাবেশের এখনও চার-পাঁচ দিন অবশিষ্ট আছে। তা সত্ত্বেও বিএনপির নেতা-কর্মীরা আজকে নয়াপল্টনে উপায় অফ করে মিছিল-মিটিং শুরু করেছিল।
‘আমরা তাদের এসব অফ করতে বলায় তারা পুলিশের ওপর হামলা করে। অতঃপর আমরা অবস্থা নিয়ন্ত্রণে ব্যবস্থা নিয়েছি। বিএনপি কর্মীদের চারপাশ হতে হামলার কারণে বাড়তি ফোর্স আনাই। বাড়তি সতর্কতার জন্য সোয়াট সদস্যরাও ঘটনাস্থলে পৌঁছে কাজ করেন।’
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন